শাসনব্যবস্থা ও গণতন্ত্র
বর্তমান অবস্থা : বর্তমানে বাংলাদেশের সংবিধানে সংসদ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ পৃথক কথাটি উল্লেখ আছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যে, সেগুলির বাস্তবায়ন সঠিকভাবে হচ্ছে না। মাননীয় সংসদ সদস্য অথবা মন্ত্রী যাহারা এই আইনগুলি তৈরি করেছেন তাহাদের কারণেই আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেনা। উদাহরণ স্বরূপ - একজন আসামিকে পুলিশ অনেক কষ্ট করে ধরে আনলো কিন্তু বিচার বিভাগ সেই আসামিকে বেআইনি খালাস দিয়ে দিল। বাস্তবে দেখা গেছে যে, এই আসামিই প্রকৃত দোষী। অন্যদিকে একজন বিচারক একটি মামলায় দোষী ব্যক্তির সাজা প্রদানের রায় দিল এবং অবিলম্বে পুলিশ বিভাগকে আসামিকে ধরার জন্য নির্দেশ দিল। কিন্তু দেখা গেল যে, পুলিশ ঐ আসামিদের ধরে নিয়ে তাদের না ধরে এমপি বা মন্ত্রী ও দলীয় নেতাদের হস্তক্ষেপের কারণে পালিয়ে যেতে সাহায্য করলো এবং পুলিশ সহ সকল নেতাদের দূষণাত্মক রাজনীতি সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ কাজ করতে পারছে না। আবার কোন সংসদ সদস্য বা কোন মন্ত্রীর নিমন্ত্রণে আইনজীবী বা দলীয় লোকজন অন্যায় কাজ করতে পার পেয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগের পূর্ণ স্বাধীনতা না থাকায় কারণে তারা সঠিক কাজ করতে পারছে না। এটা আমাদের দেশের বর্তমান রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা। আমাদের দেশের সংবিধান অনুযায়ী সরকারী নিয়োগ এবং পদোন্নতি দেওয়ার ক্ষমতা বিচার বিভাগের উপর কর্তৃত্ব স্থাপন করতে পারে এবং চাকুরির জন্য নিয়োগ দিতে পারে; তাদের চাকুরিচ্যুত করতে পারে এবং যে কোন সময় তাদের বদলি করতে পারে। সমস্যাঃ আমাদের দেশের বর্তমান রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় অনেক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। মাননীয় সংসদ সদস্য বা মাননীয় মন্ত্রীর হস্তক্ষেপে আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করতে পারছে না। একজন এমপি বা মন্ত্রীর বিচার বিভাগ ও আইন বিভাগের উপর কর্তৃত্ত থাকার কারণে তাদের কাজ গুলো সঠিকভাবে করতে পারে না। ফলে সত্যিকারে আসামী সাজাপায়না এবং নির্দোষ ব্যক্তি সাজা পায় । প্রস্তাব ঃ সরকারি দলের প্রধান কর্তৃক প্রধান বিচারপতি ও পুলিশ প্রধান নিয়োগ প্রাপ্ত হবেন। নিয়োগ দেওয়ার পরে তাদের কাজের উপর কোন হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। বিচার বিভাগ ও আইন বিভাগের অন্যান্য সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী সংবিধানের নিয়োগ বিধি অনুযায়ী নিয়োগ প্রাপ্ত হবেন । সেক্ষেত্রে সরকার প্রধান সহ সরকারি দলের কোন সদস্যদের চাকুরীচ্যুত, রদবদল ও বদলির ক্ষমতা থাকবে না। বিচার বিভাগের ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতি সহ সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর চাকুরীচ্যুত, রদবদল ও বদলির ব্যাপারে সংবিধানের আইন অনুযায়ী বিচার বিভাগই সঠিক ব্যবস্থা নিবে এবং আইন বিভাগের ক্ষেত্রে পুলিশ প্রধান সহ অন্যান্য সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর চাকুরীচ্যুত, রদবল ও বদলির ব্যাপারে আইন বিভাগ সংবিধানের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবে। এখানে সরকার প্রধান বা দেশের প্রধানের কোন হস্তক্ষেপ থাকবে না এবং এটা সংবিধানে লিপিবদ্ধ থাকবে। উক্ত প্রস্তাব অনুযায়ী সংসদ, বিচার বিভাগ ও আইন বিভাগ যদি পূর্ন স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করতে পারে তাহলে বাংলাদেশকে একটি পূর্নগণতান্ত্রীক দেশ বলা যাবে। উল্লেখিত সকল সমস্যা দূর করে উন্নত ও দূর্নীতি মুক্ত রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে চিহ্নত হবে। উপকারিতাঃ সংসদ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগ পূর্ণ স্বাধীনতা পেলে সঠিক কাজ করতে বাধ্য থাকবে । বাংলাদেশর কোন ব্যক্তি খারাপ কাজ করতে সাহস পাবে না। দেশ হবে দূর্নীতি মুক্ত এবং সভ্যসমাজ গড়ে উঠবে। যখন একটি দেশে সভ্যসমাজ গড়ে উঠে তখন সে দেশে শিক্ষা, ব্যবসা, চিকিৎসা সহ সবকিছুর উন্নতি হয়। এভাবে একটি দেশ বিদেশের কাছে উন্নত দেশ হিসাবে পরিচিত হবে এবং একটি পূর্নগণতান্ত্রীক দেশ হিসাবে চিহ্নিত হবে।
বর্তমান অবস্থা : আমাদের দেশের বর্তমান রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা হলো জনগন ভোটদেয় একজন এমপিকে। বাংলাদেশে মোট ৩০০টি আসন। এই ৩০০ আসনের এমপি জনগনের ভোটে নির্বাচিত হয়। যারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে তাদের দলের প্রধানকে সরকার প্রধান করা হয়। সরাসরি জনগন ভোট দিয়ে সরকার প্রধান করতে পারে না । সমস্যা ঃ সরকার প্রধান করার জন্য জনগন সরাসরি ভোট দিতে পারছে না। জনগন যোগ্য ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে এমপি নির্বাচিত করে। কিন্তু জনগনের ইচ্ছা থাকলেও যোগ্য ব্যক্তিকে দেশের সরকার প্রধান করতে পারছে না। এটা একটি গণতন্ত্র রাষ্ট্রের জন্য বিশাল সমস্যা। সরকার প্রধানের নিকট অনেক ক্ষমতা থাকে। কোন অযোগ্য ব্যক্তি যদি সরকার প্রধান হয় তাহলে জনগনের জন্য এবং দেশের সমস্যা সৃষ্টি করে। সরকার গঠনে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ক্ষেত্রে বড় দল গুলো অনেক সময় ছোট দলগুলোর উপর নির্ভরশীল হতে হয়। ফলে ছোট দলের যতই অপরাধ থাকুক সেগুলো মাফ হয়ে যায় এবং বড় দলের সংগে যোগ দিয়ে সরকার গঠন করে । ছোট দলগুলো বিভিন্ন অনৈতিক কার্যকলাপ ও বিভিন্ন দূর্নীতি করার সুযোগ পায় । প্রস্তাব ঃ সরাসরি জনগনের ভোটে সরকার প্রধান নির্বাচিত করতে হবে। জনগনের ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে যোগ্য ব্যক্তিকে দেশের সরকার প্রধান করতে হবে। সরকার প্রধানের জন্য সরকারি দল, বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র যে কোন ব্যক্তি প্রার্থী হতে পারবে। জনগন যেমন ভোট দিয়ে এমপি নির্বাচিত করে তেমনি জনগনই ভোট দিয়ে দেশের সরকার প্রধান নির্বাচিত করবে। দেশের প্রধানও সরাকরি জনগনকে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে । উপকারিতা ঃ সরাসরি জনগনের ভোটে দেশের সরকার প্রধান নির্বাচিত হলে একজন সৎ ও যোগ্য ব্যক্তি সরকার প্রধান হবে। দেশ পরিচালনার জন্য তখন ঐ সরকার প্রধান উপযুক্ত হবে। সরকার প্রধানের বিশেষ কিছু ক্ষমতা সংবিধানে উল্লেখ আছে। সেক্ষেত্রে একজন যোগ্য ব্যক্তি যদি সরকার প্রধান হয় তাহলে দেশের উন্নতি হবে।
বর্তমান অবস্থাঃ বর্তমানে আমাদের দেশের সকল দলই দলীয় প্রধানের মাধ্যমে এমপি কেনডিডেট দিয়ে থাকে। যে ভোটার যে দল করে তখন সে তার মনোনীত না হলেও দলীয় ভাবে নির্বাচিত প্রার্থীকে ভোট দেয়। তখন দেখা যাচ্ছে যে, দলীয় প্রার্থী নির্বাচিত হলো কিন্তু জনগনের মনোনীত ব্যক্তিকে তারা ভোট দিতে পারলো না । সমস্যাঃ জনগনের ভোট এমপি নির্বাচিত হলেও দলীয় সদস্য তাদের মনোনীত ব্যক্তিকে এমপি নির্বাচিত করতে পারছেনা। এভাবে দেশের সব কয়টি আসনে যদি সব দলের সদস্যদের মনোনীত ব্যক্তি ছাড়া দলীয় প্রধানের মনোনীত ব্যক্তিকে এমপি নির্বাচিত করা হয় তবে ঐ এমপিরা জনগনের সুখ-দুঃখ সম্পর্কে সচেতন থাকে না । তারা তাদের নিজেদের কাজ করেন ও দলীয় প্রধানের ভাবাপন্য হয়ে থাকেন। দেশের জনগনের উন্নতি হয় না এবং দেশের উন্নয়নে বাধার সৃষ্টি হয়। দেশে দূর্নীতি বেড়ে যায়। শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগ, অর্থিক উন্নয়নসহ সকল কাজে সমস্যার সৃষ্টি হয়। সকল রাজনৈতিক দলের দলীয় সকল কমিটি গঠনে দলীয় প্রধান ও এমপিদের হাত রয়েছে। ফলে দেশের ভালো রাজনীতিবিদরা দল ত্যাগ করছে এবং এক পর্যায়ে রাজনীতি থেকে অবসর নিচ্ছেন। দেশের খারাপ লোক গুলো যারা অসাদুপায় অবলম্বন করে অর্থ উপার্জন করছে তারা দলীয় প্রধান সহ উর্ধতন নেতাদের ইচ্ছা অনুসারে অনেক সময় টাকার জোরে রাজনীতি করছে। এই সকল লোকগুলোকে রাজনীতি থেকে বাদ না দিলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। প্রস্তাবঃ সকল দলের মধ্যে প্রাইমারির মাধ্যমে কেনডিডেট বলতে প্রত্যেকটি দলের এমপি যে এলাকা থেকে নির্বাচিত হয় সেই এলাকায় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে সঠিক কেনডিডেট নির্বাচনের জন্য ঐ দলের সদস্যদের গোপন ভোটাধিকার প্রয়োজন। কারণ অনেক সদস্য বিভিন্ন কারণে সঠিক ব্যক্তিকে সমর্থন করতে পারে না। গোপন ভোটের মাধ্যমেই সকলদলের মধ্যে সত্ত যোগ্য সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হিসাবে বিবেচিত হবে। সেক্ষেত্রে একটি বাড়তি আর্তিক ব্যয়ের প্রয়োজন হবে। এই আর্থিক ব্যয় সকলদলের প্রার্থীগনই বহন করতে পারবে। এভাবে প্রাইমারির মাধ্যমে এমপি কেনডিডেট দেওয়া হলে সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী সকল এমপি জনগনের মনোনীত ব্যক্তিই হবে। উল্লেখ থাকে যে, এই সিদ্ধান্তের বাইরে কোন প্রার্থী স্বতন্ত্র বা অন্য কোন দল থেকে ৫ বছরের মধ্যে এমপি কেনডিডেট হতে পারবে না। সকল দলের রাজনৈতিক কমিটি গঠনেও অনুরূপ দলীয় সদস্যদের মধ্যে প্রাইমারির মাধ্যমে কেনডিডেট দিতে হবে এবং সকল রাজনৈতিক কমিটি গঠন করতে হবে। এখানে উপরের কোন হাত থাকবে না। প্রকাশ্যে কেনডিডেট বাছাই হবে না। সদস্যদের গোপন ভোটের মাধ্যমে প্রাইমারি কেনডিডেট নির্বাচিত করতে হবে। উল্লেখিত বিষয় গুলির দলীয় গঠনতন্ত্র ও সংবিধানে আইন পাস করতে হবে এবং বাস্তবায়ন করতে হবে । উপকারিতাঃ সকল দলের মধ্যে প্রাইমারির মাধ্যমে এমপি কেনডিডেট দেওয়া হলে সকলদলই সৎ ও যোগ্য কেনডিডেট বাছাই করতে পারবে। ফলে জনগন তাদের মূল্যবান ভোটটি যোগ্যব্যক্তিকে দিতে পারবে। দেশের সবকয়টি আসনে যোগ্য ব্যক্তি এমপি নির্বাচিত হলে দেশের উন্নয়ন হবে। কেনডিডেট বানিজ্য কমবে এবং সৎ, যোগ্য ও দেশ প্রেমিক ব্যক্তি রাজনীতিতে ফিরে আসবে। দলীয় অঙ্গ সংগঠনের সংখ্যা কমবে।
লোকাল সরকার বলতে প্রত্যেকটি জেলা বা উপজেলা পর্যায়ের পৌরসভা এবং প্রত্যেকটি ইউনিয়ন পরিষদকে বোঝানো হয়। নিম্নে তাদের দায়িত্ব পালন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। বর্তমান অবস্থা ঃ আমাদের দেশে লোকাল সরকারের স্বাধীনভাবে কাজ করার কোন ব্যবস্থা নেই। একটি ইউনিয় পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বরদের সমন্বয়ে প্রয়োজনীয় একটি এলাকায় একটি প্রজেক্টের প্রস্তাব এল.জি.ই.ডি অফিসে প্রদান করলেও দেখা যায় যে, এমপির সুপারিশ ছাড়া ঐ প্রজেক্টটি বাতিল হয়ে যায় । এক্ষেত্রে প্রজেষ্টটি ছিল খুবই জরুরী। অন্যদিকে অপর একটি ইউনিয়নের থেকে প্রজেক্টির প্রস্তাব হলে এমপির সুপারিশে দ্রুত পাস হয়ে যায়। এক্ষেত্রে প্রজেক্টি বেশি জরুরী ছিল না। এখানে এল.জি.ই.ডি অফিস কর্মকর্তাদের কাজের কোন স্বাধীনতা নেই। তদ্রুপ পৌরসভার ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, পৌরসভার যে ওয়ার্ডের কাজের বেশি প্রয়োজন সেখানে কাজ না করে অন্য একটি পৌরসভা বা অন্য একটি ওয়ার্ডে কাজ করা হয়। লোকাল সরকারকে দায়িত্ব পালন করতে না দেওয়া এমপি বা মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ বা তাদের কর্তৃত্ব থাকায় এল.জি.ই.ডি এবং পৌরসভা তাদের দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়। সমস্যা ঃ লোকাল সরকারকে তাদের দায়িত্ব পালন করতে না দেওয়ায় নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। কোন ইউনিয়ন পরিষদের সঠিক উন্নয়ন হয় না। কোন পৌর সভার সঠিক উন্নয়ন হয় না। স্থানীয় এমপির হস্তক্ষেপ, মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ লোকাল সরকারের কাজে বাধার সৃষ্টি হয়। ফলে এল.জি.ই.ডি পূর্ন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। ইউনিয়ন ও পৌরসভার উন্নয়ন না হওয়ায় দেশের উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না। সরকার প্রধানের হস্তক্ষেপের ক্ষমতা না থাকলে ইউনিয়ন ও পৌরসভার উন্নয়ন সম্ভব হবে । প্রস্তাবঃ লোকাল সরকারকে তাদের পূর্নস্বাধীনতা দিয়ে দায়িত্ব পালন করতে দিতে হবে। ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তার মেম্বরদের সাথে যৌথভাবে কাজ করে কোন প্রজেক্টের প্রস্তাব এল.জি.ই.ডি অফিসে দিলে ঐ অফিস কর্মকর্তা কর্তৃক পরিদর্শণ সাপেক্ষে প্রজেক্টি পাস করা হবে। অন্য কোন শক্তি বা এমপি, মন্ত্ৰী হস্তক্ষেপ করবে না। পৌরসভার ক্ষেত্রে পৌর মেয়র তার পরিষদের সকল কমিশনারদের নিয়ে যৌথভাবে প্রজেক্টের প্রস্তাব দিবেন। এভাবে লোকাল সরকার তাদের দায়িত্ব পালন করবে। এক্ষেত্রে সাধারন জনগন লোকাল সরকারকে কাজে সাহায্য করবে। সরকার প্রধানের যদি সরকারি কর্মকর্তাদের উপর কোন কর্তৃত্ব না থাকে তাহলে এটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব । উপকারিতা ঃ লোকাল সরকারের দায়িত্ব পালনে প্রত্যেকটি ইউনিয়ন ও পৌরসভা যথাসময়ে উন্নয়ন মূলক কাজ করতে পারবে। এভাবে আমাদের দেশের উন্নয়ন কাজ দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাবে। দেশ থেকে ঘুশ,দূর্নীতি কমবে এবং কাজের মান উন্নত হবে।
বর্তমান অবস্থা: আমাদের দেশে বর্তমানে দেখা যায় যে, সরকারি বা বিরোধী দলের এমপিরা তাঁদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সব সময় দলের সভাপতির পক্ষে ভোট দিতে বাধ্য হন। অন্যথায় দলীয় সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা হয় এবং সংসদ পদ শূন্য হয়। সমস্যা: অনেক এমপি তাঁদের মতামত বা ভোটের অধিকার সঠিক জায়গায় দিতে পারেন না। যে সকল এমপি তাঁদের ভোটের অধিকার ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রদান করতে বাধ্য হন, তারা সঠিকভাবে কোনো কাজ করতে পারেন না। দলীয় প্রধানের হস্তক্ষেপ তাঁদের কাজের বাধা সৃষ্টি করে। প্রস্তাব: দেশ ও জনগণের স্বার্থে প্রত্যেক এমপি/সংসদ সদস্যকে তাঁর মতামত বা ভোটের অধিকার দলের বাইরে দিতে পারবে এমন একটি আইন প্রণয়ন দলের গঠনটাকে এবং সংবিধানকে রাখতে হবে। তবে সেক্ষেত্রে মতামতের অপব্যবহার দেশের এবং জনগণের জন্য কল্যাণকর হতে হবে বিষয়টি উল্লেখ থাকবে। দলের বাইরে ভোট দিলে তাকে দলীয় সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার করা যাবে না এবং সংসদ পদ শূন্য হবে না। এটা দলীয় গঠনতন্ত্র এবং সংবিধানে লিখিত থাকতে হবে এবং বাস্তবে প্রয়োগ করার জন্য সুনির্দিষ্ট আইন থাকতে হবে। দলীয় প্রধানের হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। দেশ এবং জনগণের স্বার্থ দলীয় স্বার্থ অপেক্ষা বেশি মূল্যায়ন হবে যদি এই আইন পাস এবং কার্যকর করা হয়। উপকারিতা: সংসদ সদস্যকে তাঁর ইচ্ছায় দলের বাইরে ভোটের অধিকার দেওয়া হলে দেশের এবং জনগণের উন্নয়নের জন্য সঠিক মতামত প্রকাশ করতে পারবে। উত্তম আইন পাস হলে প্রত্যেক এমপি দেশের এবং জনগণের জন্য নিজস্ব সঠিক এবং কার্যকরী মতামত প্রকাশ করতে পারবে। সকল দলের এমপিরা যদি উন্নয়নের জন্য কাজ করতে এবং কোনো কাজের জন্য বাধা না পায় তাহলে দেশের উন্নয়ন দ্রুত বৃদ্ধি পাবে।
বর্তমান অবস্থা: আমাদের দেশে বিরোধী দল বা সাধারণ জনগণ সরকারের দলের কোনো কাজের বিরুদ্ধে কোনো নিয়ম-কানুন ছাড়াই হরতালের ডাক দেয়। হরতাল একটি গণতান্ত্রিক অধিকার হলেও এই হরতালের কারণে অনেক মানুষ মারা যায় এবং দেশের অনেক সম্পদের ক্ষতি হয়। সমস্যা: সুনির্দিষ্ট কোনো আইন ছাড়া হরতাল হলে সাধারণ জনগণের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। দেশের সম্পদ নষ্ট হচ্ছে। দেশের অর্থনীতি খুবই খারাপ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে অনেক ক্ষতি হচ্ছে। দিন মজুররা অনাহারে বা অভাবে দিন কাটাচ্ছে। শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থায় বিশাল ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। প্রস্তাব: বিরোধী দল বা সাধারণ জনগণের কোনো ব্যক্তি সরকারের দলের কোনো কাজের বিরুদ্ধে যদি হরতাল ডাকাকে প্রয়োজন মনে করেন তাহলে সেই ব্যক্তি বা বিরোধী দল উপজেলা বা জেলা পর্যায়ে হরতালের ডাক দিতে হলে জেলা জজ সাহেবের বরাবর হরতালের বিষয়বস্তু ও নির্ধারিত তারিখ সহ একটি আবেদন করতে হবে। উক্ত আবেদনটি মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার ও জনগণের মতামত পাওয়ার জন্য ঐ ব্যক্তি বা বিরোধী দল ও জেলা জজের সমন্বয়ে একটি ফোরাম ম্যান্ডেট এর মাধ্যমে হ্যাঁ ভোট বেশি হলে জেলা জজ হরতাল কার্যকর করার জন্য ঐ ব্যক্তি বা বিরোধী দলকে জানাবেন। অতঃপর হরতালটি কার্যকর হবে। এভাবে সাধারণ ব্যাক্তি হরতালের ডাক দিতে হলে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বরাবর হরতালের বিষয়বস্তু ও তারিখ উল্লেখ করে আবেদন করতে হবে এবং মিডিয়ার সাহায্যে জনগণের মতামত সকল পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে প্রচার করতে হবে এবং জনগণের হ্যাঁ ভোট বেশি হলে হরতাল কার্যকর করা হবে। এভাবে আমাদের দেশে একটি আইন তৈরি করতে হবে এবং সেটা বাস্তবায়নের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। হরতাল একটি গণতান্ত্রিক অধিকার। দেশের জনগণের মতামতে হরতালের পক্ষে হ্যাঁ যদি বেশি হয় তাহলে হরতাল হবে। কিন্তু হরতালের পক্ষে না যদি বেশি হয় তাহলে হরতাল হবে না। সেক্ষেত্রে হরতাল করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। উল্লেখিত সকল বিষয়ে জন্য আইন থাকতে হবে। প্রচার মাধ্যম– পত্রিকা, বিভিন্ন টিভি চ্যানেল, মানববন্ধন, হাত মাইক। উপকারিতা: উল্লেখিত আইনের মাধ্যমে হরতাল হলে জনগণের কোন ক্ষতি হবে না। জনগণ পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করতে পারবে। দেশের কোন সম্পদ নষ্ট হবে না। অন্য দিকে অতিমাত্রার কারণে বিরোধীতার কারণ হবে না। এভাবে দেশের উন্নয়ন হবে। এভাবে ব্যক্তি স্বার্থ থেকে দেশ ও জাতির স্বার্থ বেশি প্রাধান্য পাবে।
বর্তমান অবস্থা: আমাদের দেশের অধিকাংশ জনগণ সংসদ সদস্যদের কাজ সম্পর্কে জানে না। সবক’টি সংসদ সদস্য ঢাকায় সরকারি আবাসিক বাসভবনে থাকেন। সরকারি অনেক অর্থ তাদের জন্য ব্যয় হয়। তারা ঢাকায় বসে তাদের নির্বাচনী এলাকা সহ সময় বাংলাদেশের জনগণের পাশে না থেকে নিজেদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতিতে খবরদারি, নিয়োগ বাণিজ্য, স্থানীয় সরকারের কাজে হস্তক্ষেপ সহ নানা বিধ উপায়ে অর্থ উপার্জন করে। এই কাজ গুলো করার জন্য নির্বাচনী এলাকা সহ ঢাকায় অনেক মাসব্যাপী সময় পোষায়। এ মাসব্যাপী দ্বারা বিভিন্ন প্রকল্পের দালালি সহ নির্বাচনের কাজ করেন। নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন পেশাজীবী ও তৃণমূলিক অবস্থার উন্নয়নের জন্য সাধারণ জনগণের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও মত বিনিময়ের মাধ্যমে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন না। সমস্যা: সংসদ সদস্য স্থায়ীভাবে ঢাকায় থাকার কারণে নির্বাচনী এলাকা সহ সময় দেশের জনগণের সাথে তাদের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। ঢাকায় তাদের জন্য সরকারি অনেক অর্থ ও জায়গার অপচয় হচ্ছে। এভাবে বাংলাদেশের সকল পেশাজীবীর সাথে সংসদ সদস্যদের দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে। কৃষক, ব্যবসায়ী, শিল্প কারখানার শ্রমিক ও গার্মেন্টস শ্রমিক সহ সকল পেশাজীবীর চাহিদা ও সমস্যা থেকে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের মালিকরাও ব্যবসার উন্নতি করতে পারছেন না। এই সমস্যার প্রয়োজন সেই সব আইন তৈরি বা পরিবর্তন করা হচ্ছে না। প্রস্তাব: আমাদের দেশের জনগণকে সংসদ সদস্যের কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে হবে। তাদের জন্য প্রত্যেক সংসদ সদস্যকে তার নির্বাচনী এলাকা থেকে এবং বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সাধারণ জনগণ ও বিভিন্ন পেশাজীবীর সঙ্গে মতবিনিময় করতে হবে। তাদের সুবিধা-অসুবিধা এবং ঐ সব এলাকার সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রগুলোকে বাহাই করতে হবে। পরবর্তীতে কৃষক, শ্রমিক এবং শিক্ষাকেন্দ্র বা গার্মেন্টস এর উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কার্যকর আইন মহান সংসদে উপস্থাপন করবেন। নির্বাচনী এলাকার যে সমস্যাগুলো দেখা যাবে সেগুলি একজন সংসদ সদস্য পর্যবেক্ষণ করতে হবে। তৃণমূলিক অবস্থার কারণে আমাদের দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন খাতে অর্থ উপার্জন হয়। যেমন- কৃষি, হাঁস-মুরগি, পাথর, সমুদ্র শৈবাল, শিল্পকারখানা, গার্মেন্টস ইত্যাদি। কোনো সংসদ সদস্য নির্বাচনী এলাকায় যদি কৃষি হয় তবে কৃষি কাজে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করে সেই অঞ্চলে উপযুক্ত সার, বীজ ও ডিভাইস নির্ধারিত মূল্যে দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। এছাড়া পরিবর্তনের জন্য সংসদ অধিবেশনে যোগ দেবেন। উপকারিতা: সকল সংসদ সদস্য নিজ এলাকার জনগণের পাশে থাকলে জনগণের ও দেশের উন্নয়নের জন্য কার্যকর আইন তৈরি ও আইন পরিবর্তনের কাজ করতে সুবিধা হবে। সরকারের অনেক খরচ কমে যাবে এবং ঢাকার শহরের উপর থেকে চাপ অনেকটা কমে যাবে। সংসদ সদস্যদের কাজগুলো সম্পর্কে জনগণ জানতে পারবে এবং অন্যায় পুনরাবৃত্তি রোধ করতে পারবে।
বর্তমান অবস্থা: আমাদের দেশে বর্তমানে প্রত্যেক দপ্তরের প্রধান সহ সকল কর্মচারী অন্য দপ্তরের প্রধান সহ অন্যান্য কর্মচারীর হস্তক্ষেপের কারণে দপ্তরের পূর্ণাঙ্গ কাজ করতে পারছেন না। মন্ত্রণালয়ের ক্ষেত্রে এক দপ্তরের মন্ত্রীর কাছে অন্য দপ্তরের মন্ত্রী খবরদারি করছেন। এমনকি প্রধানমন্ত্রীও অনেক সময় হস্তক্ষেপ করছেন। ফলে কোন দপ্তরই তাদের কাজগুলো সঠিকভাবে করতে পারছে না। সমস্যা: প্রত্যেক দপ্তরের কর্মচারি ও কর্মচারী তার দপ্তরের কাজ সম্পর্কে অবগত থাকে কিন্তু অন্য দপ্তরের কর্মচারি ও কর্মচারী ঐ দপ্তরের কাজ সম্পর্কে অবগত নয়। ফলে দপ্তরিক কাজগুলো করতে সর্বক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। বিচার বিভাগের অনেক কর্মচারি আইন, কৃষি ও খাদ্য বিভাগের কার্যাবলির কাজ করছে। উদাহরণ স্বরূপ- হাইওয়ের সহ বিভিন্ন রোডে গাড়ির কাগজপত্র চেক ও জরিমানার ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করছে। অথচ এই কাজগুলো হাইওয়ের পুলিশ কর্মচারী ও সার্জেন্টের কাজ। বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য ভেজাল ও ফরমালিন মেশানো এবং দোকানের মেয়াদ উত্তীর্ণ দ্রব্যসহ বিভিন্ন খাদ্য দ্রব্যের নেয়াম যাঁচাই বাছাইসহ পরিদর্শন ও জরিমানার ব্যবস্থা ম্যাজিস্ট্রেট করে থাকে। সেক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের বিচার কাজ বাদ দিয়ে বিভিন্ন টিম গঠন করে বিভিন্ন দপ্তরের কাজ করছে। কৃষি ও খাদ্য দপ্তরের কর্মকর্তারা কোন কিছু করতে পারছে না। এভাবে দপ্তরিক কার্যাবলির বিভিন্ন উপায় অন্য জায়গায় চলে যাচ্ছে। ফলে সঠিক যাচাই-বাছাইসহ পরিদর্শন ও জরিমানা হচ্ছে না। এলআইইউইউ কার্যাবলির প্রভাবশালী ব্যক্তির হস্তক্ষেপের কারণে এলআইইউইউ কার্যাবলি সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না। প্রস্তাব: এক দপ্তরের কাজে অন্য দপ্তরের সকল প্রকার হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। বিচার বিভাগ বিচার বিভাগের কাজ করবে, আইন বিভাগ আইন বিভাগের কাজ করবে, কৃষি বিভাগের কাজ কৃষি বিভাগ করবে, খাদ্য বিভাগের কাজ খাদ্য বিভাগ করবে। এভাবে প্রত্যেকটি দপ্তরের কাজ ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা থেকে শুরু করে উপজেলা, জেলা, বিভাগ, মন্ত্রণালয় সহ সব জায়গায় ঐ দপ্তর বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অন্য কোন দপ্তর বা সরকারের প্রভাবন্বিত কোন হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। যদি কোন ব্যক্তি উক্ত প্রভাবের বিরুদ্ধে কাজ করে তাহলে কোন দপ্তর সঠিকভাবে চলবে না। এলআইইউকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়ে কাজ করতে দিতে হবে অন্যথায় দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। উপকারিতা: উক্ত প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন হলে আমাদের দেশের সকল দপ্তরের কাজ সঠিকভাবে হবে। সকল দপ্তরের কাজের গতি বৃদ্ধি পাবে এবং বাংলাদেশের সর্বক্ষেত্রে উন্নয়ন হবে।